April 7, 2024
এনআইএ, সিবিআই, বিজেপির ভাই ভাই : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পুরুলিয়ায় জনসভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য
মণিপুরে দেখুন, মেয়েদের নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে। মেয়েদের সম্মান নেই। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতেও তাই। সারা ভারতে তাই। একমাত্র আমার দলিত ভাই-বোনেরা সম্মান পায় বাংলায়। আদিবাসী ভাই-বোনেরা জানে, আমি ওঁদের সঙ্গে ধামসা-মাদল বাজাই। ঝুমুর নাচ করি। আদিবাসী গুণীজনদের সংবর্ধনা দিই, আদিবাসী উৎসব, করম পুজো— সব করি। আমরা সবাইকে নিয়ে করি।
আগে আদিবাসী স্কুল, আশ্রমে যে ছেলে-মেয়েরা থাকতেন, তাঁরা ১০০০ টাকা ভাতা পেতেন। এখন ১,৮০০ টাকা পান। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যায় টাকা। বন পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। সাঁওতালি ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য তফসিলি আদিবাসীরা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। বিদেশে গেলে ২০ লক্ষ টাকা।
আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া যাবে না। তাঁদের জমি তাঁদের হাতেই থাকবে। অরণ্যের তাঁরাই বড় সম্পদ।
রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। দেখলাম মাটির বাড়ি। তাতে দু’টি বাড়িতে পদ্ম আঁকা রয়েছে। একটিতে তৃণমূলের প্রতীক আঁকা। মোদী সরকার ঘর তৈরির জন্য, রাস্তা তৈরির জন্য, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। ১০০ দিনের কাজের টাকা আমরা দিয়েছি। জব কার্ড হোল্ডারদের টাকা মারা যাবে না।
১১ লক্ষ বাড়ির তালিকা পাঠিয়েছিলাম। বাড়ি দেওয়ার জন্য। ভোটের আগে কল সেন্টার থেকে সে সব বাড়িতে ফোন করছে। ফোন করে বলছে, ‘নতুন করে বিজেপিতে আবেদন করো, ঘর পাবে।’ আমি বলেছি, না বন্ধু, ভোট হলে ১১ লক্ষ মানুষের ঘর তৈরি করব। মাটির বাড়িতে যাঁরা পদ্ম আঁকছেন, তাঁদের বলি, ওটা পদ্ম নয়, গদ্য নয়, ভাঁওতা, জুলুমবাজি। আমরা চাই গরিবের ভালবাসা। আমরা চাই আদিবাসী, মাহাতোদের নিয়ে একসঙ্গে থাকতে।
রাস্তায় আসতে আসতে দেখলাম আমার ছবি মুছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন মোছা হয়নি? তাঁর নামে বন্ধু-কেন্দ্র। এটা প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল? আমি আঙুল দিয়ে দেখালাম।
মানুষ প্রতিবাদ করলে এনআইএকে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মধ্যরাতে মহিলা ঘরে ঘুমাচ্ছেন। গদ্দারের এলাকায় মধ্যরাতে পুলিশকে না জানিয়ে চলে গেল। আগে পুলিশের উর্দি পরে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে অনেকেই বদমায়েশি করেছে। মেয়েরা কী করে বুঝবেন? মা-বোনেরা প্রতিবাদ করলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ডায়েরি করা হল। বলছে তৃণমূলের সব বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করো।
আবার রামনবমী আসছে। চকোলেট বোম ফেললেও এনআইএকে ঢুকিয়ে দেবে। পুরুলিয়ায় সব হোটেলে গিয়ে এনআইএ খোঁজ নিচ্ছে, কে থাকছে। তোমার কী? তোমার কী কাজ? কোন হোটেলে কোন পার্টির লোক থাকবে? নির্বাচনের সময় আমরা সরকারি জায়গায় থাকি না। যে হেলিকপ্টার নিয়ে কর্মসূচিতে যাই, সেটাও দলের টাকায় ভাড়া করি।
এনআইএ, সিবিআই, বিজেপির ভাই ভাই। ইডি আর ইনকাম ট্যাক্স। বিজেপির টাকা তোলার বক্স। আমাদের আছে লক্ষ্মীর ভান্ডার। ওদের আছে ইডির ভান্ডার। আমাদের আছে কৃষির ভান্ডার। ওদের রয়েছে সিবিআই ভান্ডার। বলছে বিজেপি করো। কেন বিজেপি করবে? অত্যাচারী সরকার।
‘একটা দানবীয় সরকার। অশুভ সরকার। আর মোদীবাবু গ্যারান্টি দিচ্ছে। আপনার গ্যারান্টি মানে নোটবন্দি। আপনার গ্যারান্টি মানে সিবিআই।
কোটি ৫ লক্ষ মহিলা টাকা পেয়েছেন। মোদীবাবুর প্রকল্পের নাম, আয়ুষ্মান ভারত। আপনি একটা সাইকেলও পাবেন না। আমরা ৯ কোটি মানুষকে সুবিধা দিচ্ছি। আমাদের গ্যারান্টি গ্রামের জন, ১০০ দিনের কাজের টাকা। মোদীবাবুর গ্যারান্টি শুধু নিজের ছবি দেখা। পাঁচ কেজির খাবারের বস্তাতেও মোদীবাবুর ছবি। কোনও দেশে এ রকম হয় না। আমি যে চাল, গম দিই, তাতে কি এ রকম ছবি দিই?
ভোট তো দিয়ে দেখলেন। এখানকার সাংসদ কিছু করেছেন? দেখতে পেয়েছেন? তিনি কালো না সাদা? বিজেপি করলেই সাদা। তৃণমূল করলে কালো।
তৃণমূলকে ভোট দিন। নয়তো আগামী দিনে ভারতবর্ষ থাকবে না। আর এখান থেকে বিজেপিকে জেতাবেন না। ওরা সব কেড়ে নেবে। ধর্ম, জাত কেড়ে নেবে। ইডি, সিবিআই লাগিয়ে দেবে।
অভিন্ন দেওয়ানি আইন পাশ করিয়েছে। আগামী দিনে তাতে সংরক্ষণ থাকবে কি না জানি না। ক্যা (সিএএ) পাশ করিয়েছে। নিজের ধর্ম মতো বিয়ে করতে পারবেন না। সবার ঘর কেড়ে নেবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মিছিল করুন, মিটিং করুন, দাঙ্গা করবেন না। এরা দাঙ্গা করে। প্ররোচনায় পা দেবেন না। নিজের মতো থাকবেন। ওঁরা এক দিন নাচবেন। আপনারা পর দিন শান্তির মিছিল করবেন।