বাংলাই ডেস্টিনি এই সত্য আজ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এবারে পশ্চিমবাংলার একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে আমরা ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে ইউকে-তে বাংলার কোন ব্যবসায় কীভাবে বিনিয়োগ হতে পারে তার জন্য তিনদিনের সফরে লন্ডন গিয়েছিলাম। আমাদের প্রতিনিধি দলে সরকারী অফিসাররাও ছিলেন। অনেক চেম্বার্সের খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকও।

আমরা সবাই একটাই পরিবার, মানে পশ্চিমবাংলার এক একান্নবর্তী পরিবার হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। আর সেখানে গিয়েও সবার সঙ্গে সবার যোগাযোগ এমন একটা আন্তরিক সম্পর্ক তইরি করেছিল যে নিজেরা সবাই তার জন্য গর্ববোধ করতাম।

রবিবার সকালে কলকাতা থেকে ফ্লাইট ধরে দিল্লি, ওখান থেকে লন্ডন, আমাদের ভারতীয় ঘড়ি অনুযায়ী যখন হোটেলে পৌঁছালাম তখন প্রায় রাত ১২-৩০, যার যার লাগেজ নিয়ে ঘরে। পরের দিন সকাল থেকে সব মিটিং শুরু, অনেকগুলো মিটিং ছিল আবার সরকারী আধিকারিকদের ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের।

সেইসব মিটিং করবার আগে সকালবেলায় পথ পরিক্রমা করতে শুরু করলাম অনেকে মিলে। প্রায় ১ ঘণ্টা পথ চলে সবাই মিলে গেলাম একটা কাফে শপ-এ। বাইরে দোকানে বসে একসঙ্গে চা-কফি, বিস্কুট বা অন্যান্য টুকিটাকি খেতে কিন্তু বেশ মজাই লাগছিল। তখন কিন্তু আর কোনটায় কত ক্যালোরি সেটা প্রায় কেউই আর ভাবছিল না। তবে একজনকে লক্ষ করেছি তিনি কফি খেলেও অত মোটা কুকিগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তিনি একজন বিজনেসম্যান। বাদবাকি আমি সঙ্গে অমিতদা, অনির্বাণ, কিংশুক, বিশ্ব, সাহেব সেজে দেবাশিস ভট্ট ও পার্থ, উ९সব, রুদ্র অশোক, মায়াঙ্করা। মন দিয়েই আমরা রাস্তার ধারে দোকানে আড্ডা মারতে মারতে কফি খাচ্ছিলাম। আর দোকানটা ছিল একবারে আমাদের উল্টোদিকে। তাই একসঙ্গে বসে রাস্তার ধারের দোকানে কখন যে সময় অত দ্রুত কেটে গেছিল, তা প্রায় বুঝে উঠতেই পারিনি। যদিও সময় আমাদের তাড়া করে যাচ্ছিল যে আমাদের মিটিং আছে।

তাই ইচ্ছে না থাকলেও তখনকার মতো আড্ডা ভেঙ্গে চলে গেলাম স্নান করতে।

চটপট স্নান সেরেই আবার পরের মিটিংয়ে বসে পড়লাম। লাঞ্চ? না, ওটা আমার জীবন থেকে অনেকদিন আগেই বিদায় নিয়েছে। তাই দিনের ভেতর ২/৩ বার চা, বিস্কুট খেলেই লাঞ্চ-এর কাজ চলে যায়।

আর লন্দনে যে আড়াই দিন এযাত্রায় ছিলাম, তাতে দিন/রাত মিলিয়ে আহার বলতে স্যান্ডউইচ জুটেছে, খুব খিদে পেলে রাতে চিকেন স্যান্ডউইচ।

যাইহোক, প্রথম দিনের সভা মানে অফিসিয়াল সভা শেষ করতে করতেই আমাদের বাকিংহাম প্যালেসে যাবার জন্য আমন্ত্রণ এসে গেল। ছোটবেলা থেকেই এই রাজপ্রাসাদের কাহিনি বারবার শুনতে শুনতে আর ঐতিহাসিক একটা হেরিটেজের সাক্ষী হয়ে থাকার জন্য ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছা তো একটাই ছিলই, তারপরে আবার যুবরাজ অ্যান্ডরুর আমন্ত্রণ। আমি আমার চিফ সেক্রেটারি, দেব আর সঙ্গে গৌতমদা ও উজ্জ্বলও ছিল। যুবরাজ আমাদের আভ্যর্থনা জানালেন। আমি তো প্রথমে যুবরাজকে বুঝতেই পারিনি, কারণ এত সহজভাবে একেবারে সাধারণভাবে তিনি দরজার সামনে থেকে আমাদের ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন যে প্রথমে হয়তো রাজবাড়ির কোনও অফিসার ভেবে ভুল করেই ফেলেছিলাম। পড়ে যখন আমাদের বসতে বলা হল, তখন বসা দেখে বুঝলাম তিনিই যুবরাজ। এরপর শুরু হল আলাপচারিতা। যুবরাজ আমাদের কাছ থেকে বাংলায় ইনভেস্টমেন্ট করার কোথায় কোথায় সুযোগ আছে তার সবটাই জেনে নিলেন। তাঁদের অনেক প্রশ্ন, প্রশ্নের মধ্যেও আবার অনেক বাস্তব প্রশ্নও, যে আপনাদের যে এত সামাজিক স্কিম চলে সাধারণ মানুষের জন্য ‘কন্যাশ্রী’ থেকে ‘শিক্ষাশ্রী’, ‘যুবশ্রী’ থেকে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য যে কাজ সে কাজগুলোর জন্য অর্থ আসে কোথা থেকে? এসব কাজের টাকা তো রাজকোষ থেকেই আসে। তবে তাতে তো আপনাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে, শিল্পের ক্ষেত্রে টাকা আসবে কোথা থেকে, এর জন্য কি আলাদা কোন তহবিল জনগণের থেকে বর্ধিত কর নিয়ে করেন কিনা? এসব নানারকম প্রশ্নের উত্তর যেমন তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তেমনি কী করে জনগণের স্কিম-এর টাকা আর ইনভেস্ট দুটো একসঙ্গে করা যায়।

সব প্রশ্ন শুনে আমি ‘যুবরাজ’কে বললাম যে, দেখুন ৩৪ বছর একটানা বাম সরকার থাকার ফলে আর অর্থনৈতিক একটা দেনাগ্রস্ত, অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া প্রায় একটা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে, কাজের গতি এনে ও বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সংস্কার করে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন থেকে শুরু করে বাংলার একটা উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালাতে শুরু করেছি, এক রাজ্য যা অর্থ পায় সরকার চালানোর জন্য, তা যদি আমাদের সরকারের রাজকোষে থাকত, তবে তো অনেক ভাল কাজ আমরা আরও, আরও করতে পারতাম।

কিন্তু অর্থভাণ্ডার শূন্য থাকায় এবং দেনার টাকা শোধ করতে করতে আমাদের প্রায় প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও কাজ বন্ধ তো হয়নি, উপরন্তু, এই চার বছরে অনেক পরিকাঠামো আমাদের সরকার তৈরি করেছে। যার ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়েছে ও হচ্ছে। এই চার বছরে শুধু উচ্চশিক্ষায় তিন লক্ষ আসন বেড়েছে, ১৩ টা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৫ টা কলেজ, ৪১টা মাল্টিসুপার হসপিটাল, ৩০০টা এস এন এস ইউ ইউনিট, শিশু চিকি९সায় এক বহুমুখী চিকি९সার ব্যবস্থা, বিনা পয়সায় গ্রামে, জেলাতে চিকি९সার ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার-সহ ৩০০০ জন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিনা পয়সায় হার্ট-এর বিভিন্ন অপারেশন করা-সহ, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, যুবশ্রী, বিশ্ববাংলা-সহ অনেক অনেক কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি। অনেক পরিকাঠামো, হাসপাতাল থেকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিক্যাল কলেজ প্রায় ২০০-র মতো কিষান বাজার, পলিটেকনিক কলেজ থেকে আই টি আই সর্বস্তরে তৈরি করার প্রচেষ্টায় অনেক নতুন পরিকাঠামো যেমন বেড়েছে, তেমনই কর্মসংস্থানের সুযোগ এসেছে।

ইন্ডাস্ট্রিও নতুন করে অনেক হচ্ছে ও হবে। আর রেলমন্ত্রী থাকাকালে প্রায় ১০/১২ টা বড় রেল-এর কোম্পানি আমি বাংলায় আগেও করেছি। সুতরাং এগুলো তো হচ্ছে- পরিকল্পনা করেই। কারণ গণতান্ত্রিক সরকারের জনগণের প্রতি অনেকগুলো দায়বদ্ধতা থাকে। যে দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয় টা সামাজিকও। সামাজিক কর্তব্য পালন করতে না জানলে, ‘গণজন’ যারা অর্থা९ ‘জনগণ’ যারা, তাদের হয়ে কাজ কে করবে।

আর ‘উন্নয়ন’ তখনই হয় প্রকৃত অর্থে, যখন উন্নয়নটা সত্যি-সত্যিই জনগণের নিকট পৌঁছতে পারে। যারা অনেক বড় বড় রাষ্ট্র তাদের তো সোশ্যাল সিকিউরিটি আছে। তারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিয়েছে নিজেদেরও তৈরি করে নিয়েছে। আর আমাদের দেশে ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম’ না থাকার ফলে, সামাজিক দায়বদ্ধতা আমাদের অনেক বেশি। আর গরিব মানুষ যতক্ষণ নিজে নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারবে ততদিন এ কাজ আমাদের করে যেতেই হবে। তবে এর জন্য শিল্প কেন থেমে থাকবে? আর ইনভেস্টমেন্ট কেন থেমে থাকবে?

কৃষি চলবে, শিল্পও চলবে। শিল্প মানে তো শুধু ইট-সিমেন্ট আর লোহার কংক্রিটের জঙ্গল নয়, শিল্পে মানে বহুমুখী শিল্পও জগতের চাহিদা ও প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। বড় শিল্পও বলতে আগে শুধু বড় বড় প্ল্যান্ট বোঝাত, এখন তো ক্ষুদ্র শিল্পের বাজার বিশ্ব অর্থনীতির দখল করে নিয়েছে। সুতরাং আইটি থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রয়োজনের প্রয়োজনীয় ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে। আর বাংলাই এর জন্য উপযুক্ত জায়গা কারণ বাংলার মেধা সারা বিশ্বের বিশ্বসেরা মেধা, বাংলার স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং অন্য জায়গার তুলনায় অনেকটাই সস্তা। বাংলার ট্যুরিজম শিল্পও পাহার-নদী-সমুদ্র-জঙ্গল দিয়ে ঘেরা পৃথিবীর এক অনন্য-অনন্যা যা সারা বিশ্বকে আকর্ষণ করে।

বাংলার শিক্ষা ও সংস্কৃতি সারা বিশ্বকে পথ দেখায় এবং বাংলা হচ্ছে লুক ইস্ট পলিসির বড় গেটওয়ে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান-সহ নর্থ-ইস্ট ও ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার গেটওয়ে। এছাড়া অনেক এশিয়ান কান্ট্রিরও গেটওয়ে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ? একেবারে প্রতিবেশী। বিমানে আধঘণ্টা, রেল-বাসেও যুক্ত।

নেপাল ঠিক তাই।

ভুটান একেবারে পাশে। কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর দু-আড়াই ঘণ্টা বিমানে। ব্যাংকক- দু’ঘণ্টা। মায়ানমার সড়কপথে খুব শীঘ্রই যাওয়া যাবে।

ব্যাংকক থেকে বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান সড়কপথে যাতায়াত করবার জন্য এডিবির সাহায্যে অনেক রাস্তার কাজ আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দিয়েছি।

বাস শুরু হয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানও একই পথের পথিক।

মাত্র ২ ঘণ্টায় চিন দেশের অনেকাংশে পৌঁছানো যায়।

সুতরাং বাংলাতেও ইনভেস্ট করলে এশিয়ার অনেক কান্ট্রিতে সে বিজনেসের সুফল ওঠানো জেতে পারে। আর এসব প্লাস পয়েন্ট আছে বলেই ব্রিটিশ সরকারের আমন্ত্রণে আমাদের লন্ডনে আসা। আমাদের আবেদন আগেও আমরা সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছিলাম। আর এবারে লন্ডনে।

আপনাদের সঙ্গে তো কলকাতার একটা সম্পর্ক আগে থেকেই আছে। ব্রিটেন তো একসময় ভারতবর্ষে রাজ করতে গিয়ে অনেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করেছিল আর বিখ্যাত কবিতার লাইন যা আজ মনে করিয়ে দেয়, যে “বণিকের মানদণ্ড, দেখা দিল রাজদণ্ড রুপে” তা তো সবার জানা।

যদি বিজনেসে পোটেনশিয়ালিটি না থাকে, তবে কেন কল্কাতাকে সেদিন আপনারা অবিভক্ত ভারতবর্ষের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন? সুতরাং আপনাদের বাংলায় আস্তে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে আপনাদের হাতে তৈরি করা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল অথবা হাওড়া ব্রিজ।

আপনারা আসুন গঙ্গার তীর ধরে সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করুন আর এডুকেশন, রিয়্যালিটি, ট্যুরিজম হেরিটেজ ইত্যাদি ব্যাপারে আপনারা নজর দিয়ে ও আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করলে আমরা খুশিই হব। প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনার মধ্যে দিয়ে খুব ভালো কথাবার্তা হল। আলোচনায় রাজপরিবার খুব খুশি।

এরপর যুবরাজের স্ত্রী স্যারা এলেন। ১৯১২ সালে মধ্যমগ্রামের অলকাদিদের একটা এনজিও প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে তাঁরা এসেছিলেন। তাই আলোচনার পর চা-তে মিলিত হলাম আরও কিছু বিশিষ্ট মানুষজনের সঙ্গে। লর্ডসের স্পিকার ‘স্যারা’ থেকে আরও অনেক ব্রিটিশ গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদের সঙ্গে। থ্যাঙ্কস গিভিং অনুষ্ঠানও হল।

চা খেয়ে এবার ফিরে আসার পালা।

ফিরে আসার সময়ও ব্রিটেন যুবরাজের সৌজন্য বিশেষভাবে লক্ষ করলাম। একেবারে শেষপ্রান্তে রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার পর্যন্ত তিনি আমাদের এগিয়ে দিলেন।

আমরা যে দুদিন অখানে ছিলাম, তখন লক্ষ করতাম ওই ‘বাকিংহাম প্যালেস’-এর বাইরেটা দেখবার জন্য বিরাট এক জনসংখ্যা অপেক্ষা করেন। সর্বদা তাঁরা ওই বাইরের প্রবেশদ্বারের থেকেও যে রাস্তার ধারে প্রধান সড়ক আছে সেই সড়ক ধরে কোলাপসিবল বৃহ९ গেটের পাশে ফুটপাত সংলগ্ন অঞ্চল দেখেই রাজকথায় কথিত একেবারে বাকিংহাম প্যালেস দেখবার আনন্দে মাতোয়ারা থাকেন। আমরা যখন রাজপ্রাসাদের বাইরে বেরিয়েছিলাম তখন লক্ষ করছিলাম জনগণের অর্থা९ বিভিন্ন দেশের ভ্রমনার্থীদের কৌতূহল জাগছিল হয়তো আমাদের দেখে, কারণ তখন তাঁরা বাইরে আর আমরা ভেতরে।

ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা চলে এলাম ব্রিটিশ সরকারের, সরকারী দফতর, সরকারী আমন্ত্রণে লোকার্নো সুইট-এ সেখানে ইন্ডিয়ার দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ মন্ত্রী ম্যাডাম প্যাটেল-এর সঙ্গে দেখা হল। তার পর আমরা এলাম সরকারী সৌজন্যে লোকার্নো সুইটের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সভায়। সেখানে আমাদের শিল্প প্রতিনিধি দল ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে তাঁদের মন্ত্রী মহোদয়া ম্যাডাম প্যাটেল ও ইন্দো–ইউকে রিলেশন নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনাসভা ও বক্তৃতা শুনতে হয়েছিল।

এ সভা আয়োজন করেছিলেন ইউকেবিসি।

সভা খুব সাফল্যের সঙ্গে হওয়ার পর আমাদের কয়েকজন এবং ব্রিটিশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে ডিনারে আমন্ত্রণ করেছিলেন ম্যাডাম প্যাস্ট্রিসিয়া। সেটাও প্রায় আলোচনার মধ্যে দিয়ে ঘণ্টা দুয়েক চলল। শেষ হল তাঁদের ঘড়ির ১১টায় অর্থা९ আমাদের ঘড়ির সময় তখন ৪/৪.৩০ বাজে।

ফিরে আসার পড়ে স্নান করে রেদি হতে হতে আমাদের ঘড়ির সময়ে ঘুম? না তার দেখাই মেলে না, একেবারে নৈব নৈব চ ।

সকাল হতেই হুজুগ সবার, টেমস নদীর পাড় ধরে লন্ডন কেমন সেজেছে চলুন দেখে আসি। ব্যস শুরু হল হাঁটা। চলতে চলতে শুরু হয়েছিল ৪০ জনকে নিয়ে আর শেষ যখন হল তখন ওই পাঁচ-সাতজন। ১০/১২ কিমি হেঁটে হোটেল থেকে একেবারে লন্ডন ব্রিজ, ওখান থেকে আবার হেঁটে পায়ে পায়ে হোটেল। প্রায় দুঘণ্টা হনটনের পর হোটেলে ফেরা। তার পরেই বেরোলাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গান্ধী মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে।

একসঙ্গে বাসে উঠে এই দুটো কাজ করে আবার পায়ে হেঁটে হোটেলে ফেরা, তার পরই ওখানে থাকাকালীন যে দুঃসংবাদ আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছিল, যে এ পি জে আবদুল কালাম আর নেই। সেই মানুষটির স্মৃতিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন, তারপর আবার রাত ৮ টায় সবার এক জায়গায় মিট টুগেদার ছিল, সেখানে যাওয়া।

পরের দিন যেদিন আমরা সকালে উঠেই পেলাম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংবাদ, আর সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে ওই রাস্তাতেই হাঁটতে হাঁটতে হাইড পার্কের পাশ ধরে প্রায় ওই দেড়-দুঘণ্টা ভাবনা-চিন্তা করে কিছু প্রোগ্রাম কাটছাঁট করার ব্যবস্থা করলাম।

আগের দিন দুপুরে হোটেলে এসেছিলেন স্বরাজ পোল। তিনি তাঁর বাড়িতে যেতে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

তাই হাইড পার্ক থেকে ফিরে আমরা স্বরাজ পল-এর বাড়িতে গেলাম। তাঁর অসুস্থ স্ত্রী আমাকে একবার দেখতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন শুনেছিলাম তাই তাঁকে দেখতে গেলাম আর এই সুযোগে ওখানকার কয়েকজন লর্ড ও শিল্পপতিদের সঙ্গে আমাদের আর একটা ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপারে সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সাংবাদিক বন্ধুরাও আমন্ত্রিত ছিলেন সেখানে। অখানে মিটিং শেষ করেই এয়ারপোর্টের পথে ফিরে আসার জন্য।

এমনিতেই বাইরে আসা-যাওয়া হয় না। তাঁর ওপর যদি পাঁচদিনের প্রোগ্রাম দুদিনে করতে হয়, তবে তাতে কাজের চাপ অনেক বেশি পড়ে যায় তা বলাইবাহুল্য। ঘুম আর খাওয়া? ও দুটো প্রায় চা-কফি-স্যান্ডউইচ আর নিদ্রাহীন কাজের মধ্যেই কেটে গিয়েছে বলতে পারেন।

তবে সব ভাল যার শেষ ভাল। আমাদের সবাই পশ্চিমবঙ্গ পরিবারের হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবেই সব কাজটা আমরা ওই দুদিনেই লন্ডনে করতে পেরেছি এত আন্তরিকতার সঙ্গে যে প্রতিটা মুহূর্তই কিন্তু আশার আলো মুখে হাসি ও ভবিষ্যতের ডেস্টিনি বাংলাই এটা প্রমাণ করতে আমরা ১০০/১০০ সফল হয়েছি। থ্যাঙ্ক টু আওয়ার ফুল টিম। কৃতজ্ঞতা বাংলার মা-মাটি মানুষকে।