Latest News

October 21, 2015

স্থির লক্ষের দিকে চোখ রেখেই এগোচ্ছে সরকার: সুব্রত বক্সি

স্থির লক্ষের দিকে চোখ রেখেই এগোচ্ছে সরকার: সুব্রত বক্সি

সুব্রত বক্সি

বহু লড়াই সংগ্রাম, চাপান-উতোরের মধ্য দিয়ে বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজ্যপাটে ক্ষমতার আসীন হয়েছেন ২০১১ সালের ২০ মে । এরপর আমরা প্রায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে এসেছি । ইতিমধ্যেই বাংলার মানুষের মনে এই সরকার মা-মাটি-মানুষ সরকার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ।

একটা সন্ত্রাসমুক্ত, উন্নয়নমুখী, যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের বাংলা গড়তে আমরা রাজ্যের মানুষের কাছে বদ্ধ্যপরিকর। সেই লক্ষ্যে চোখ রেখেই এগোচ্ছে সরকার। তবে কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে এই পরির্বতন বাস্তবাইয়িত হয়েছে, তা প্রতি পদক্ষেপেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ফিরে আসে আম্যাদের কাছে। ২০১১ সালের ঐতিহাসিক পঞ্চদশ বিধানসভা নির্বাচন। মাত্র ২৭ দিন ১৮৭-টি জনসভার মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার পর্যন্ত বাংলার ৯ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। কখনও হেলিকপ্টর, কখনও স্কুটারে, কখনও সাইকেলে, কখনও গাড়িতে, আবার কখনও পায়ে হেঁটেই । সেই নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে তিমি সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন করেছিলেন, নতুন বাংলা গড়ার জন্য তাঁর ‘পরিবর্তন’-এর ডাককে সমর্থন করতে । সেদিন নেত্রীর ডাকে সারা দিয়ে রেজ্যের সর্বস্তরের, সর্বধর্মের, সর্বজাতির মানুষ গড়ে দিয়েছিলেন নতুন পরিবর্তনের সরকার ।

শুরু হল বাংলার মানুষের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ চলা । একদিকে বিরাট অর্থনৈতিক ঋণের বোঝা । অন্যদিকে মানুষের অসীম চাহীদা । এই পরিস্থিতিতে সব দিক মাথায় রেখেই নিরলস পরিশ্রম করে তিনি শুরু করলেন উন্নইয়নের কর্মযজ্ঞ । আজ সুদূর দার্জিলিং থেকে জঙ্গলমহল পর্যন্ত এক শান্তির বাতাবরন উপলব্ধি করা যায় । কারণ, সরকার তৈরী মাত্র ১৮ দিনের মাথায় জঙ্গলমহলে দাঁড়িয়ে অনুন্নয়নের অন্ধকার সরিয়ে উন্নয়নের দরজা খোলার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি । বন্ধ হয়ে যাওয়া পঞ্ছায়েতের সব দরজা ধীরে ধীরে খুললেন । মানুষের কাছে তার পাওয়া পৌঁছে দিতে শুরু করলেন । স্কুল-কলেজে ফের বেজে অঠল ক্লাসের ঘণ্টা । জঙ্গলমহলের মানুষ নতুন করে জীবন শুরু করল । শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে মানুষের কাছে প্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করলেন । সর্বস্তরের ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনদেরও শামিল করলেরন উন্নয়নের কাজে । প্রায় না খেতে পাওয়া মানুষকে পেট ভরে অন্ন যোগাতে ধাপে ধাপে সমস্ত জঙ্গলমহলে ২ টাকা কিলো পৌঁছে দিলেন । এক সময় কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে কষ্ট করে পানীয় জল আনতে যেতেন জঙ্গলমহলের মা-বোনেরা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে এসে সেই প্রত্যন্ত এলাকায় টিউবওয়েল তৈরি-সহ পর্যাপ্ত পানীয় জলের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে দিলেন । প্রায় প্রতি পরিবার পিছু হাতে তুলে দিলেন সাইকেল । এই উদ্যোগ একদিকে যেমন ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে অত্যন্ত সহায়ক হল, তেমন ভাবেই দূর-দূরান্ত থেকে জল আনার কষ্টও লাঘব হয়েছে ।

পরবর্তী পর্যায়ে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠল জঙ্গলমহল । উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতাই জঙ্গলমহলের সার্বিক ছিত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে দিল । এক সময় কাগজ খুললেই মাওবাদী হামলায় মানুষের মৃত্যুর খবরই ছিল জঙ্গলমহলের রোজনামচা । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার কাণ্ডারি হওয়ার পর সেই খবর এখন ইতিহাসমাত্র । পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে চার বছরে মাওবাদী হামলায় একটাও খুনের ঘটনা নেই ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ২০১৩ সালের পঞ্ছায়েত নির্বাচনে মানুষ তাদের নিজেদের পঞ্চায়েত গঠন করেছে । ফিরে পেয়েছে নিজের অধিকার । আজ মানুষ তার নিজের পাওনা সরকারের কাছে বুঝে নিচ্ছে । তাই জঙ্গলমহলবাসী আজ সুখে, আনন্দে দিন যাপন করছে । এটাই মা-মাটি-মানুষের সরকারের দায়িত্ব ।

অন্যদিকে তাকান । সুদূর পাহাড়ে দার্জিলিংয়ের অবস্থা এক সময়ে কী ছিল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসীন হওয়ায় আগে পাহাড়ের মানুষকে উত্যক্ত করতে নানা উসকানিমূলক বক্তব্য আমরা দেখেছি । সেই সময় খবরের শিরোনামে রোজই জাইগা করে নিত দার্জিলিংয়ের দু’দিন, চার দিন, সাত দিন, এমনকী অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধ, অবরোধ । লক্ষ্য ছিল দার্জিলিংকে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া । এই প্রতিকূলতের চ্যাল্যেঞ্জ নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গেলেন, বারবার । পাহাড়ের মানুষকে জয় করেছেন এবং বুঝিয়েছেন, দার্জিলিং বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । ক্ষমতায় আসার পরই তিনি আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে বাংলের পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সকে পুনরায় জায়গা করে দিয়েছেন । আজ বাংলা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ সপরিবারে, শান্তিতে ছুটি কাটাতে আসেন দার্জিলিংয়ে । তাই আজ জঙ্গলমহল থেকে পাহাড়ের অবস্থা উপলব্ধি করলেই বাংলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কত উন্নত বোঝা যায় ।

উন্নয়নমুখী বাংলার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মকাণ্ড আজও চলছে । সীমিত অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে পুঁজি করে গ্রামীণ শহর, আধা শহরে নানা প্রকল্প নিয়ে তিনি মানুষের কাছে পৌঁছেছেন । গীতাঞ্জলী, নিজ ভূমি নিজ গৃহ, জল ধরো জল ভরো, আর্থিক সহায়তা দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, কিষান মান্ডি, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, মাতৃযান, শিশুসাথী-সহ বিভিন্ন প্রকল্প, ব্লকে ব্লকে স্কুল তৈরি, পুরনো স্কুলের পরিকাঠামো ও মানোন্নয়ন, আইটিআই-সহ নানা প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত করেছেন।

শুধু প্রকল্প তৈরি করে ঘরে বসে থাকেননি। মানুষ যাতে সুফল পায় তা নিশ্চিত করতে গত সাড়ে চার বছরে বারবার আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে গিয়েছেন জেলায় জেলায়। একশোর উপর প্রশাসনিক বৈঠক সেরে ফেলেছেন। পৌঁছে গিয়েছেন মহকুমা পর্যন্ত। মানুষের পাওনা সময়মতো মিলছে কি না তা দেখতে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে চলেছেন। আর এই কর্মকাণ্ডের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছেছে বলেই মানুষ যখনই সুযোগ পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন। তাই তাঁর শাসনকালে ছোট-বড় যত নির্বাচন হয়েছে সমর্থনের জোয়ারে ভেসে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁর প্রতিশ্রুতি পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

কিন্তু মনে রাখতে হবে এর মধ্যেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি-সহ কিছু সংবাদমাধ্যম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কু९সা, অপপ্রচার করে বাংলার এই অগ্রগতিকে রুখে দিতে চাইছে। এই লড়াই প্রতিদিনই চলছে। মানুষ সুযোগ পেলেই এই বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আশির্বাদ করছেন। তবু চলছে চক্রান্তের প্রচেষ্টা।

তাই আমার সহকর্মীদের কাছে আবেদন, কঠিন না হলেও এই তা९পর্যপূর্ন লড়াইয়ে আমাদের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে। সব সময় সজাগ থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিশ্রম, মানুষের সমর্থন, আর কর্মীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের কাছে তাঁদের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছেন। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ঐতিহাসিক নজির। তিনি প্রতিমুহুর্তে মানুষের কোথা ভেবে কাজ করেছেন। আর সেই কাজের সার্বিক সুফল গ্রাম-বাংলার প্রত্যন্ত মানুষের দোরে দোরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বই আমাদের। সরকার এবং মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে প্রতি মুহূর্তে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে আমাদেরই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ আজ শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে আলোচিত হয়। কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ বাংলা তথা ভারতের আঙিনা ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাজের আঙ্গিক আজ সমগ্র দেশের কাছে উন্নয়নের মডেল।

আমাদের মনে রাখতে হবে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। কু९সা, অপপ্রচারকে প্রতিহত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যপাটের মেয়াদে তাঁর রিপোর্টে কার্ড নিয়েই আমরা মানুষের কাছে পৌঁছব। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখতে হবে সমাজের সব অংশের মানুষের সঙ্গে। সরকারী প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা মানুষ পাচ্ছে কিনা তা নজর রাখতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা এবং সার্বিক কর্মকাণ্ডই রাজ্যের পাহাড়চূড়া থেকে সাগর কিনারের তরঙ্গ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারের মূল উপজীব্য।