Latest News

December 20, 2013

রাজ্যের প্রথম ইংরেজি মাধ্যম হাই-মাদ্রাসা চালু হল নদিয়ায়

রাজ্যের প্রথম ইংরেজি মাধ্যম হাই-মাদ্রাসা চালু হল নদিয়ায়

এ-ও এক বিপ্লব। নদিয়া জেলার চাপড়ার প্রত্যন্ত এলাকা পানিনালায়। গড়ে উঠেছে রাজ্যের প্রথম ইংরেজি মাধ্যম হাই-মাদ্রাসা। যেখানে একেবারে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হবে ইংরেজিতে। বর্তমানে রাজ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অধীনে কোনও ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসা নেই।


পানিনালার ওই হাই-মাদ্রাসা তৈরির কাজ শেষ। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই আবাসিক মাদ্রাসাটিতে শুরু হবে ছাত্র ভর্তি। সমস্যা একটাই। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ইংরেজি মাধ্যমের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করতে এখনও বছরখানেক সময় লাগবে। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা জানিয়েছেন, সামনের শিক্ষাবর্ষের জন্য অন্য মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। `যে সব হাই-মাদ্রাসায় ছাত্রের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অনেকটাই বেশি, সেখান থেকে কিছু শিক্ষককে পানিনালায় নিয়োগ করা হবে। ডেপুটেশনের মাধ্যমেও কয়েক জন শিক্ষককে নেওয়া হবে।`


ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে, এমন শিক্ষকদেরও প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন নদিয়ার কালীগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ। তারপর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।


রাজ্যে যে শ`পাঁচেক হাই-মাদ্রাসা রয়েছে, তার অধিকাংশতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কিন্তু, পানিনালার হাই-মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি নেওয়া হবে প্রথম শ্রেণি থেকে। পরিষদীয় সচিব জানান, চাপড়ার ওই প্রান্তিক এলাকায় কোনও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল নেই। হঠাৎ উঁচু ক্লাস থেকে ইংরেজির মাধ্যমে পড়তে হলে বিপাকে পড়বে পড়ুয়ারা। তাই নতুন হাই-মাদ্রাসায় গোড়া থেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হবে।

পাঠক্রম কী হবে? এমনিতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও হাই মাদ্রাসার সিলেবাসের তেমন ফারাক নেই। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলির পাঠক্রমই পড়ানো হবে এই মাদ্রাসায়। অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে একশো নম্বরের আরবি পড়তে হবে পড়ুয়াদের।


নতুন সরকার পানিনালার ওই হাই-মাদ্রাসাকে আবাসিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়তি অর্থও বরাদ্দ করে। ৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাদ্রাসার ঝকঝকে ভবন তৈরি শেষ। দিন কয়েক আগে জেলায় আসেন মন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা আরফান আলি বিশ্বাস। তাঁরা ওই মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম, ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়া ও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আলোচনায় বসেন জেলাশাসক পি বি সালিম ও পরিষদীয় সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ওই হাই-মাদ্রাসায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠক্রম পড়ানো হবে।


ইংরেজি মাধ্যমের হাই-মাদ্রাসা গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সেন্ট পলস কলেজের বাংলার অধ্যাপক শেখ মকবুল ইসলাম বলেন, `এটা সরকারের দিক থেকে একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ।` চাপড়ার বেলতলা হাই-মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক আবুল হোসেন বিশ্বাস বলছেন, `উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য ইংরেজি ছাড়া গতি নেই। পানিনালার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সরকার সেই সুযোগ করে দেওয়ায় পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হবে।`

ছোটবেলা থেকে ইংরেজির ভিত তৈরি না হলে কতটা সমস্যা হয়, তা নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সইদুল ইসলাম। ২০০৫ সালে হাওড়ার খলপুর হাই-মাদ্রাসা থেকে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় বসা সইদুলের কথায়, `ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে স্কুল ছাড়ার পর নানা সমস্যা হয়েছে। রাজ্য সরকার আরও কিছু ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসা চালু করলে ছাত্রদের উপকারেই আসবে।`

The article was first published in Anandabazar Patrika, Kolkata on December 20, 2013