সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ৪, ২০২৫

যদি একটাও নাম কাটা যায় তাহলে আমরা বিজেপি সরকারের পতন ঘটাব : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

যদি একটাও নাম কাটা যায় তাহলে আমরা বিজেপি সরকারের পতন ঘটাব : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলায় SIR ঘোষণার পর মঙ্গলবার রাজপথের মহামিছিল থেকে আপামর মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার শপথ নিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে SIR প্রক্রিয়া। দুপুর ২টো নাগাদ রেড রোডে বিআর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। রানি রাসমণি রোড হয়ে কেসি দাস মোড়, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ক্রস করে মিছিল শেষ হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে।

মঞ্চ থেকে নেত্রীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বাংলার ২ কোটি ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। নেত্রী বলেন, “কোনও চিন্তা করবেন না। লড়াই করে আমাদের অধিকার আদায় করে নেব। অনেক অসংগঠিত সেক্টর রয়েছে, কেউ হকার, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করে, তাঁরাও ভাবছেন, নামটা বাদ যাবে না তো! পরিযায়ী শ্রমিকরাও এটা ভাবছেন! বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি হয় না। হিন্দি ভাষায় বলে সবাই পাকিস্তানি হয়ে যায় না। যে যেখানে কাজে যাচ্ছে, বাংলাদেশি অ্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার সময়ে বিজেপি কোথায় ছিল? আমি যা বলি, সেটা দেখায় না। AI করে। আমার ছবি দেখাবে, আর অন্য কথা! বিজেপির তো লুঠের টাকা।”

বিজেপির নেতাদের বাবু সম্বোধন করে তিনি বলেন, ” বিজেপিতে কয়েকটা গদ্দার রয়েছে। যাকে যা ইচ্ছা বলে এজেন্সিকে দিয়ে। ৮০টা গাড়ি নিয়ে ঘোরে, আবার নাকি জনগণের নেতা। সর্বত্র বডি গার্ড নিয়ে ঘোরে। একজন আইনজীবী খবর দিলেন, গতকাল কোনও এক বাবু বলছেন, তিনি একটা জেলায় যাবেন, কোনও জনগণ না থাকেন, ভিড় না থাকেন! কোন হরিদাস পাল? আজ পুলিশ দেখতে যাবে, কোথায় লোক থাকবে আর থাকবে না! সাহস থাকে তো মানুষের কাছে যাও না। টাকা আছে বলে ভিডিয়ো করে সামাজিক মাধ্যমে, গদি মিডিয়ায় থাকতে পার, মানুষের জন্য উপযুক্ত নয়। কটা সিটে জিতেছিল। মহারাষ্ট্রে কটা সিটে জিতেছিল মনে আছে? তাই বাবুকে বলছি, আমি চেয়ারটাকে সম্মান করি, তাই কোন বাবু বলছি না, প্রথম বাবুও হতে পারে, দ্বিতীয় বাবুও হতে পারে, আবার বাচ্চারা চামচ দিয়ে দুধ খায়, সেই বাবুও হতে পারে, আমি কাউকে ইঙ্গিত করছি না। মনে রাখবেন, দালালি করারও একটা লিমিট রয়েছে।”

আধার কার্ড আর প্রমাণপত্র নয় সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আধার কার্ড করতে প্রত্যেকের থেকে ১০০০ টাকা করে নিয়েছিল। চুরি করেছিল! যদি আধার কার্ড বানাতে প্রত্যেক ভোটারের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে নিল, তাহলে এখন কেন বলছে আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়? এদিকে, ব্যাঙ্কেও লিঙ্কের জন্য আধার নম্বর লাগে! মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। দিল্লি থেকে এই সরকারকে সরাও। কোনও আধারের প্রয়োজন পড়বে না। এখন আবার কাস্ট সার্টিফিকেট দিচ্ছে। কত কার্ড বানাবে? ২০২৪ সালে আপনারা যে জিতেছিলেন, কোন ভোট নিয়ে জিতেছিলেন? কোন ভোটার লিস্ট ছিল? যদি এই লিস্ট মিথ্যা হয়, তাহলে আপনার সরকারও মিথ্যা। আপনাদের চেয়ারও মিথ্যা।”

নোটবন্দি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাতারাতি নোটবন্দি করে দিল। আমি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করেছি। কোনও কালো টাকা ফেরত এসেছে? উপরুন্ত গেছে! ১০০-র ওপর লোকের মৃত্যু হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। বলেছিল, সব কালো টাকা ফেরত আনবে দেশে। LIC-র টাকাও চলে যাচ্ছে, এটাও সেফ নয়।”

বিজেপির বাংলা দখলের প্রসঙ্গে তাঁর বার্তা, “এক তো দেশে মীরজাফ্ফর আছে, যাঁর হাতে রক্তের দাগ রয়েছে, আপনি কি ভাবছেন, ওরা সব স্বর্গে যাবে? নিজেদের দলেই তো কত বিভেদ? আসলে বাংলার ওপর ওদের খুব রাগ। বাংলার সঙ্গে ওরা পেরে ওঠে না। গদিওয়ালারা ভাবছে, যেন তেন ভাবে ২ কোটি লোকের নাম বাদ দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিই, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিই, কিংবা দেশ থেকে তাড়িয়ে ওদের ক্ষমতা দখল করে নিই।”

বিজেপির দেওয়া ভোটের তথ্য ভুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি এটাও শুনেছি, ওরা বলছে, যদি জোর করে ২ কোটি লোকের নাম বাদ দিয়েও জিততে না পারি, তাহলে এখন বলছে অন্য কথা। লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস নাকি পেয়েছে, ৪০ শতাংশ, ওরা নাকি পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ। যত দূর মনে পড়ছে, ২০০৪ সালে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে একা জিতেছিলাম বাংলায়। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোট হয়, সেই ভোটার লিস্ট তৈরিতে ২ থেকে আড়াই বছর সময় লাগে। আজ মোদী ও শাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে কুর্সিবাবু, যিনি ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন, তাঁর ইতিহাস পাতিহাস হবে। বিহার প্রথমে বুঝতে পারেনি, যখন বুঝেছি, নাম কেটে বাদ গিয়েছে। কিন্তু আমরা প্রথম থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করছি, যদি একটাও নাম বাদ যায়, বিজেপি সরকার ভেঙে ছাড়াব। আমাদের কাছেও তথ্য কম নেই। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত! কথায় কথায় মীরজাফর এজেন্সি পাঠায়। আমাদের তিন বিধায়ককে ফোন করে মিথ্যা কেস দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি ৭ বার সাংসদ, ৪ বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ৩ বারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও আমার ডেথ অফ বার্থ নিয়ে কৈফিয়ত দিতে হবে? আমাদের ভদ্রতা আমাদের দুর্বলতা নয়।কেন এতদিন পপুলেশন সেনসাস করলে না। ওড়িশার একজনকে করে দিয়েছে, বাংলার পপুলেশন সেনসাসের হোতা! ভোটের পর এসআইআর করলে কী সমস্যা হত? তা নয়। ওদের কত বাবু, বড় বাবু, ছোটো বাবু…আমি চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু দালালিরও একটা সীমা থাকে। অত্যাচারের সব সীমা তো আপনারা পার করে ফেলেছেন।’’

সবশেষে তিনি বলেন, “নোটবন্দির পর ওরা এখন জনবন্দি-গণবন্দি করছে। এনআরসি হতে দেব না। কী করবে? আমার রক্ত নেবে? এত কিছুর পরও যদি নাম বাদ যায়। ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়, তাহলে একটা গান বেঁধে দেব।”

এরপর মঞ্চ থেকে স্লোগান তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিজেকে বাঁচান, বিজেপি হটান।”