সাম্প্রতিক খবর

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

বাংলার টাকা আটকে রাখা হয়েছে কোন অধিকারে? : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলার টাকা আটকে রাখা হয়েছে কোন অধিকারে? : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল অমিত শাহের নেতৃত্বেই। বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়েই ক্ষমা চাওয়া উচিত তাঁর।’ বিদ্যাসাগর কলেজ প্রাঙ্গণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ :

আমি এই অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক করতে চাই না। আজ এখানে আসার কারণ রাজনীতি নয়। কিন্তু যেহেতু আপনারা জিজ্ঞেস করেছেন, আমরা ২০১৯ সালে এখানে যে ঘটনা ঘটেছিল এবং কার নির্দেশে [বিজেপি] ঘটেছিল, তা অস্বীকার করতে পারি না। ভাঙা মূর্তিটি এখনও ভেতরে রাখা আছে, ভেতরে গেলে শ্রদ্ধা জানাবেন।

ছোটবেলা থেকে আমরা সকলে পড়েছি এবং বড়দের মুখে শুনেছি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা। আপোসহীন লড়াই, বাংলার নবজাগরণের পথিকৃত, ‘বর্ণপরিচয়’-এর স্রষ্টা, বাল্যবিবাহ প্রথা বন্ধের পুরোধা— বাংলার সংস্কৃতিকে একের পর এক ধাপে তিনি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আমরা সবাই তা শিখেছি। কিন্তু যারা বাইরে থেকে এসে আমাদের উপর উত্তর ভারতের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়েছিল, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, বাংলার মানুষ তাদের জবাব দিয়েছে।

আমার অত্যন্ত খারাপ লেগেছে, কারণ কেউ [অমিত শাহ] যিনি মাত্র ১০ মিনিট দূরে একটি পুজো প্যান্ডেল উদ্বোধন করতে এসেছিলেন, এতটুকু বিবেকবোধ নেই যে, আজ বিদ্যাসাগরের ২০৫তম জন্মজয়ন্তী। তাঁর মনেও হয়নি বিদ্যাসাগরের বাড়ি বা বিদ্যাসাগর কলেজে এসে শ্রদ্ধা জানানোর। একারণেই আমরা বলি ওরা বাংলা-বিরোধী। মানুষ আগেও দেখেছে, আগামীতে আবারও দেখবে।

আমাদের রাজনৈতিক লড়াই চলতে থাকবে, কিন্তু বাংলার মনীষীদের যেভাবে অপমান করা হয়েছিল, তা ভোলা যাবে না। ওরা জানে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় জন্মেছিলেন। ওরা পঞ্চানন বর্মার নামও ভুল উচ্চারণ করে। ওরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় বা ক্ষুদিরাম বসুর অবদান সম্পর্কেও অজ্ঞ। আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে ওদের থেকে শেখার দরকার নেই। আজ যিনি দুর্গাপূজার প্যান্ডেল উদ্বোধন করছেন, তিনিই পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন বাংলায় কোনও দুর্গাপুজো হয় না। আজ সেই দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যের উৎসব বা উদযাপন এধরনের স্বীকৃতি পায়নি। আমাদের কন্যাশ্রীও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ওদের আমাদের বাংলার থেকে শেখা উচিত।

আজ কলকাতা হাইকোর্টও একটি নির্দেশ দিয়েছে যে, বীরভূমের গর্ভবতী মহিলা সোনালী বিবি-সহ আরও পাঁচজনকে FRRO দ্বারা বহিষ্কারের নির্দেশ অবৈধ। আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য তাদের গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তীতে, আজকের হাইকোর্টের থাপ্পড়ের সঙ্গে সঙ্গে ওদের প্রথমে ক্ষমা চাইতে হবে।

প্রথমে ওদের বিদ্যাসাগরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যেভাবে তারা দুর্গা ও কালী মন্দিরে যাচ্ছে, মা তাদের আশীর্বাদ করুন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের অবদানকে যেভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, এবং তাঁর [অমিত শাহ] নির্দেশে মূর্তি ভাঙা হয়েছিল— সেই লোকজন আজও বিজেপিতেই আছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আমি আজ রাজনীতি নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। তবে যেহেতু প্রশ্ন করেছেন, তাই উত্তর দিলাম। আশা করি আজকের দিনটা অরাজনৈতিক থাকবে। আমি সৌভাগ্যবান যে, নবজোয়ার যাত্রার সময় বীরসিংহ গ্রামপঞ্চায়েত, ঘাটালে গিয়ে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান দর্শন করতে পেরেছিলাম। ক্ষমতায় আসার পর আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার শুধু ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোডে তোরণ তৈরি করেনি, বরং প্রায় ২.৫ কোটি টাকা খরচ করে গোটা সম্পত্তির সংস্কার করেছে। আমরা শিশু উদ্যান, স্মৃতি মন্দির ও প্রবেশদ্বার তৈরি করেছি। কলকাতাতেও তাঁর বাড়ির সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজ করেছি। নতুন প্রজন্ম যেন মনে রাখে, ইতিহাস যেন ভুলে না যায়, আমরা সেই চেষ্টা করেছি।

[কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মন্তব্যের জবাবে] ওদের আগে প্রশ্ন করুন: বাংলার প্রাপ্য ২ লক্ষ কোটি টাকা কবে ছাড়বে? কেন এই টাকা আটকে রাখা হয়েছে? যদি বলে আমরা মিথ্যা বলছি, তবে তারা চ্যানেল ও সময় বেছে নিক। আমি নথি-প্রমাণ নিয়ে হাজির হব, এমনকি তাদের নিজেদের চ্যানেল হলেও। বাংলার টাকা আটকে রাখা হয়েছে কোন অধিকারে?

উনি [অমিত শাহ] বলেন “সোনার বাংলা” তৈরি করবেন। তবে ওদের জিজ্ঞেস করুন: দু’দিন আগে পাটনায় প্রধান সড়ক বসে গিয়ে গাড়ি ধসে পড়ল। ওরা কি সোনার বিহার গড়তে পেরেছে? গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশে রোজ সেতু ভেঙে পড়ে। সোনার মধ্যপ্রদেশ, সোনার উত্তরপ্রদেশ, সোনার ত্রিপুরা বা সোনার ঝাড়খণ্ড কেন হল না? উত্তরপ্রদেশে তো বাংলার সেতুর উদাহরণ দেওয়া হয়, তবে গত সাত বছরে সোনার ব্রিজ কেন তৈরি হয়নি সেখানে? বাংলার থেকে টাকা নিয়ে নিজেদের রাজ্যে খরচ করছে। সোনার উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত কি গড়তে পেরেছে?

দু’দিন আগে বাংলায় টানা বৃষ্টি হয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যম বলেছে, ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’। কিন্তু চার ঘণ্টায় ৩০০ মিমি বৃষ্টি হলে সমস্যা হবেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে রাজনীতি করা উচিত নয়। অথচ বাংলার দৃঢ়তা দেখুন— ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এত বৃষ্টির পরেও অমিত শাহ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদি শহর জলের তলায় থাকত, তিনি কীভাবে ঘুরে বেড়াতেন? এটা প্রমাণ করে যে সরকার যদি দৃঢ় হয়, তাহলে কাজ করা যায় এবং আমাদের সরকার তাই করেছে।

ওরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলায় ক্ষমতায় এলে ‘অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার’ চালু করবে। তাহলে কেন ত্রিপুরা, অসম বা রাজস্থানে তা করছে না? কেন মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১,০০০ টাকা জমা দিচ্ছে না, যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন? আমরা তো সেসব রাজ্যে ক্ষমতায় নেই, তাহলে কেন নিজেদের রাজ্যে করে না?

আমার প্রশ্ন, কেন উনি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে এখানে আসলেন না? গাড়িতে ১০ মিনিটের রাস্তা। কারণ উনি বাংলা-বিরোধী। বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে অস্বীকার করে। বাংলার বিপ্লবীরা ব্রিটিশদের হারিয়েছিল, বিজেপি কোন ছাড়? বাংলার মানুষের দৃঢ়তার সামনে ওরা কিছুই নয়।

এই প্রশ্নের উত্তর আমায় নয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি বা বিজেপিকে দিতে হবে। তবে আমি এটুকু বলব— এগুলো রাজনৈতিক গিমিক, কোনও জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নয়। বাংলার মডেলের সঙ্গে তুলনা করুন: আমরা নির্বাচনের পরপরই প্রতিটি পরিবারের মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছি। চাইলে আমরা তিন বছর অপেক্ষা করে ২০২৪ নির্বাচনের আগে এটাকে রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার করতে পারতাম। কিন্তু তা করিনি। কারণ আমাদের কাছে সুষ্ঠু শাসন ও জনকল্যাণই মুখ্য। এটাই আমাদের আর ওদের মধ্যে পার্থক্য। আমরা মানুষের পাশে আছি বছরের ৩৬৫ দিন, দিনের ২৪ ঘণ্টাই- শুধু ভোটের আগে নয়।