জুন ৬, ২০১৯
নির্বাচনের ফলের পরে কেন এত অশান্তি? এবার বিজয় মিছিল করা বন্ধ হোকঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিমতায় নিহত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নির্মল কুন্ডুর বাড়ী গিয়ে তাঁর পরিবারকে আশ্বস্ত করেন যে হত্যাকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। তিনি বলেন যে সি আই ডি এই কেসের তদন্ত করবে। তিনি নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে আর কাউকে বিজয় মিছিল করতে দেওয়া হবে না।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ—
আমি আজ নিহত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নির্মল কুন্ডুর বাড়ী গিয়ে তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের আশ্বস্ত করেছি যে এই ঘটনার পুরো বিচার হবে। আমি ওনাদের আমার সমবেদনা জানিয়েছি।
আমাদের দেখতে হবে যে এই খুনের পিছনে আসল মাথা কারা; শুধুমাত্র ভাড়াটে খুনি নয় এর পেছনে কোন কোন মাথা কাজ করেছিল তা খুজে বার করতে হবে।
এ রাজ্যে বিজেপি ১৮-টা আসন পেয়েছে, তাও অনেক ছল-চাতুরি করে, পয়সা ছড়িয়ে।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে মানুষের মনে ভয় ঢোকাতে খুন-খারাপি করে বেরাবে।
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্য-র পরে কংগ্রেস সহানুভূতির ভোট পেয়ে এ রাজ্যে ১৬-টা আসন পেয়েছিল। তখন তো কোনও ভয় বা হিংসা-র রাজনীতি হয় নি।
২০০৯ সালে আমরা কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে ২৬-টা আসন পেয়েছিলাম, তার জন্যে তো হিংসার আশ্রয় নিতে হয়নি।
এটা কি ধরনের রাজনীতি? এক দিকে ওরা মানুষ খুন করছে আর অন্যদিকে দিল্লীতে বসা কিছু মিডিয়া দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে যে এখানে নাকি ওদের সমর্থকরা খুন হয়েছে।
আমি খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। ওদের লোক আমাদের দলের কর্মীদের খুন করছে। কিন্তু এটা কেন হবে? রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ওরা উলঙ্গ খুনের রাজনীতি চালু করার চেষ্টা করছে।
বাংলা সংস্কৃতির জন্যে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুলের জন্যে পরিচিত- বঙ্কিমচন্দ্রের জন্যে পরিচিত।
ওরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙ্গেছে, যাকে কিনা সারা ভারতে শিক্ষা এবং বিশেষ করে মহিলাদের শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রদূত মানা হয়।
ওরা আজ রাজা রামমোহন রায়ের নামে কুৎসা ছড়াচ্ছে কারণ উনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন।
আমার বলতে লজ্জা লাগছে যে মেঘালয়ের রাজ্যপাল বাংলার মেয়েদের সম্মন্ধে বলেছেন যে তারা মুম্বাই-র ড্যান্স বারে কাজ করে। এরকম লোকের রাজ্যপালের পদে থাকা উচিৎ নয়, কিন্তু উনি আছেন কারণ উনি বিজেপি-র নেতা। আমি ওদের নেতাদের বলব যে মুখে একটু লাগাম দিতে। দেশ শাসন করতে হলে ওটা করতে হয়।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। কেন্দ্র সরকার কাজ করা শুরু করুক। রাজ্যে আমরা কাজ করা শুরু করে দিয়েছি।
আমরা তদন্ত করব বিজেপি কোথায় কোন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কত টাকা খরচ করেছে। আমি সাংবাদিকদের-ও বলব তদন্ত করতে।
আমার মনে হয় নির্বাচনে যেভাবে অসাধু কৌশল নিয়ে বিজেপি জিতেছে তাই ঢাকতে এখন খুনের রাজনীতি চালাচ্ছে।
মেদিনীপুর, কেশপুর, হুগলী, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-এমন অনেক জায়গায় ওরা বিজয় মিছিলের নাম করা হামলা চালিয়েছে, তাই আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি যে এগুলো এখনি বন্ধ করতে হবে।
আমাদের শান্তি মিছিল এবং মানুষের সাথে সংযোগের কাজ যেমন চলছে চলবে, এতে যদি কেউ আক্রমণ করে তাহলে আইন অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
আমি বাংলার মানুষের কাছে আবেদন করব শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের মত কাজ করুক, রাজ্য সরকারগুলি তাদের মত কাজ করবে।
কেউ কাউকে কিছু সময়ের জন্যে বোকা বানাতে পারে, কিছু মানুষকে বোকা বানাতে পারে কিন্তু সবসময় তা পারে না। আমাদের সেটা মাথায় রাখতে হবে।
সিপিএমের হার্মাদ আজ বিজেপি-র হার্মাদ হয়ে খুন করে বেড়াচ্ছে। কুছবিহারের দিনহাটায়, হাবড়ার অশোকনগরে অশান্তি করে চলেছে এমনকি কোলের শিশুকেও খুন করেছে ওরা।
আমি মনে করি রাজনীতি নির্দিষ্ট মতাদর্শে চলা উচিৎ, কোনওরকম হিংসার রাজনীতি কাম্য নয়।