Latest News

December 19, 2018

মোদির বিদেশভ্রমণ কোটি কোটি টাকা খরচ, বাংলার জন্য টাকা নেই কেন্দ্রের: অভিষেক

মোদির বিদেশভ্রমণ কোটি কোটি টাকা খরচ, বাংলার জন্য টাকা নেই কেন্দ্রের: অভিষেক

আজ বাঁকুড়া জেলার ছাতনায় এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:

এখানে আগত সকল মানুষকে স্বাগত জানাই। আপনাদের সামনে নিজের মতামত পেশ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এই জনসভায় মানুষ এসেছেন আমি তাদের নতমস্তকে আমার প্রণাম, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

আপনাদের লড়াকু মানসিকতা, মুষ্টিবদ্ধ হাত, একবুক আবেগ, স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে সিপিএমের বন্দুকের নলের তোয়াক্কা না করে গ্রামেগঞ্জে কাঁধে তৃণমূলের পতাকা বহন করে ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদের’ হুঙ্কার দিয়ে যারা গ্রামে গঞ্জে এই জেলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারাই দলের প্রকৃত সম্পদ।

আমি বারংবার বলি, আমাদের দলে কোনও দু’নম্বর তিন নম্বর বলে কোনও জায়গা নেই। এক নম্বরে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাকি যারা আছেন, সবাই সৈনিক ও কর্মী। তারাই জীবন দিয়ে দল তৈরী করে।আপনারা না থাকলে নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রী, সাংসদদের গুরুত্ব থাকতো না। আপনারা না থাকলে মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা হত না, পরিবর্তনও হত না।

আজ আমরা সমবেত হয়েছি ব্রিগেড চলো সমাবেশকে সামনে রেখে। এই বছর ২১শে জুলাই ধর্মতলার বুক থেকে আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ১৯শে জানুয়ারি ২০১৯ সালে ব্রিগেড চলোর ডাক দিয়েছেন।

আগেরবার আমাদের নেত্রী ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলেন ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি। তার আগে আমাদের দল বাংলায় পরিবর্তন করে ২১শে জুলাই ২০১২ সালে ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলাম।

কিন্তু, আগামী ব্রিগেডের প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশী। এখনকার সময়ে বিজেপি দেশের সমস্তও বিরোধী নেতাদের বাড়িতে সিবিআই, ইডি, আয়কর দিয়ে হানা দিচ্ছে। হাজার চেষ্টা করেও তৃণমূলকে তারা দমাতে পারেনি। তৃণমূল কংগ্রেসকে ধমকে চমকে দমানো যাবে না। তৃণমূল কংগ্রেস বিশুদ্ধ লোহার মত, তাকে যত আঘাত করবে, সে তত বলিষ্ঠ হবে।

এই ব্রিগেডে সমাবেশে শুধু তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা নন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব আসবেন। সমাজবাদী দল হোক, বিহারের আরজেডি দল হোক, ডিএমকে হোক, আপ হোক, চন্দ্রবাবু নাইডু হোক, যশোবন্ত সিন্হা হোক, শত্রুঘ্ন সিন্হা হোক, তেজস্বী যাদব হোক কিংবা অরবিন্দ কেজরিওয়াল হোক, অনেকেই ইতিমধ্যেই আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেন, আমরা বাংলার মানুষ ভারতবর্ষের অসুরদের কাছে মাথা নত করব না। তারা অনেক চেষ্টা করেছে বাংলাকে ধমকে চমকে বাংলাকে নিপীড়িত করে রাখার। কিন্তু পারেনি।

সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কি ফল হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। বাংলার মন্ডামিঠাই খেতে গিয়ে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে ও ছত্তিশগড়ের রসগোল্লা ও বিরিয়ানি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এই হয়েছে তাদের করুন পরিণতি।

এই বিজেপিরা হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে নিজেদের প্রচার করে। ছত্তিশগড়ে যেখানে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু, রাজস্থানে যেখানে ৯৪ শতাংশ ভোটার হিন্দু, মধ্যপ্রদেশে যেখানে ৯১.৭ শতাংশ ভোটার হিন্দু কিন্তু তারাও বিজেপিকে ভোট দেয়নি। বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আমি ২০১৮ সালের ২রা জানুয়ারি ডুমুরজোলার ছাত্র যুব সম্মেলনে বলেছিলাম ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। কিন্তু, তার আগে ২০১৮ সালেই বিজেপি ভোকাট্টা হয়ে গেছে। অহঙ্কার পতনের কারণ, অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর জেনে রাখা উচিত। অহঙ্কার ঘুড়ির মত হয়। যত ওপরে উঠবে, তত তাড়াতাড়ি ভোকাট্টা হয়ে নীচে পড়বে।

বিজেপির কোনও অস্তিত্ব এই বাংলায় থাকবে না। এই বাংলা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাংলা, স্বামী বিবেকানন্দের বাংলা, রবীন্দ্রনাথের বাংলা, নজরুলের বাংলা, মাতঙ্গিনী হাজরার বাংলা, রামমোহন রায়ের বাংলা, বিদ্যাসাগরের বাংলা। এই বাংলা মাথা নত করতে জানেনা। যারা ভেবেছিল সাম্প্রদায়িকতার আঁধারে হিন্দু মুসল্মানের মধ্যে দাঙ্গা লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করব, তারা বুঝেছে ২০১৪ সালে যে গরু দুধ দিয়েছিল, ২০১৮ সালে সেই গরুই মুখে গোবর লেপে দিয়েছে। ২০১৯-এ আরও গোবর লেপে দেবে। গরু দুধ দেয়, গরু ভোট দেয় না।

ওরা সবকিছু নিয়ে রাজনীতি করছে। গরু নিয়ে রাজনীতি, মন্দির নিয়ে রাজনীতি, মসজিদ নিয়ে রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, হনুমান দলিত না ব্রাহ্মণ সেই নিয়ে রাজনীতি, রাম নিয়ে রাজনীতি করছে। সব জায়গায় এরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছেন, সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান – বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। আমাদের ধর্ম আমাদের শিখিয়েছে, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা। আমাদের হিন্দু ধর্ম কোনওদিন বিভাজন শেখায়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন হিন্দু ধর্মের জন্য কাজ করেছেন, মুসলমান, শিখ, খৃস্টান, জৈন, বৌদ্ধ সব সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ধর্মের জন্য আজ যা করেছেন ভারতবর্ষের অন্য্ ২৮টা মুখ্যমন্ত্রী করেননি।

দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। তারাপীঠের উন্নয়ন করেছে, তারকেশ্বরে উন্নয়ন করেছেন, অন্যদিকে গঙ্গাসাগর – হিন্দুদের বাৎসরিক মিলনক্ষেত্রের – আমূল পরিবর্তন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হয়েছে। ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি হেরিটেজ ঘোষণা করার কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। কালীঘাটে এসপি মুখার্জী রোড থেকে শুরু করে কালীমন্দির গর্ভগৃহ পর্যন্ত ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন স্কাইওয়াক আগামীদিন নির্মাণ হতে চলেছে। এছাড়া বেলুড় মঠে জাহাজ সার্ভিস শুরু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন।

এই বাঁকুড়া জেলায় চারটি নতুন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে, চারটি সরকারি কলেজ হয়েছে, ছটি নতুন আইটিআই হয়েছে, প্রায় ৩ লক্ষ কন্যা কন্যাশ্রী পেয়েছে, ২.৫ লক্ষ সবুজ সাথীর সাইকেল প্রদান করা হয়েছে। সবুজশ্রীর জন্য চারাগাছ দেওয়া হয়েছে। কেউ মারা গেলে সমব্যাথী দেওয়া হচ্ছে। জন্ম থেকে মৃত্যু সরকার তার পাশে আছে।

তারা হুঙ্কার দিচ্ছে, এবার বাংলা পারলে সামলা। আমি বলি, আগে মধ্যপ্রদেশ সামলা, রাজস্থান সামলা, ছত্তিসগড় সামলা, উত্তরপ্রদেশ সামলা, মহারাষ্ট্র সামলা, তারপর ভাবিস বাংলা। যারা প্যান্ডেল সামলাতে পারেনা, তাদের মুখে সরকার সামলানোর কথা মানায় না।

তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, একটাও পালন করেনি। আমাদের নেত্রী যা যা বলেছিলেন, সব কথা রেখেছেন। এই পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে যেখানে জ্যোতি বাবু, বুদ্ধবাবু এসে পৌঁছননি, সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে প্রায়ই এসে সরকারি পরিষেবা প্রদান করে যান। তিনি জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছেন।

আমরা বলেছিলাম, আমরা ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহলে এলে শান্তি ফেরাব। আমাদের সরকার করেছে। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরের জমি ফিরিয়ে দেব, আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্ষমতায় এলে গ্রামে গ্রামে ঝকঝকে রাস্তা করে দেব, আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্ষমতায় এলে বাড়িতে বাড়িতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেব, আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্ষমতায় এলে পানীয় জলের সুব্যবস্থা আমাদের সরকার করবে, আমরা করেছি।

আর তারা কী বলেছিল? ‘আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়, বছরে ২কোটি চাকরি দেব, সকলের ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা দেব, তারা কিছুই দেয়নি। ওরা যেভাবে জনগণকে বোকা বানিয়েছে, একইভাবে ওদের বোকা বানিয়ে ওদের মুখে চুনকালি লেপে বাংলা থেকে অসুরদের বিদায় জানানোর দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।

আজকে বিজেপি বলছে রথ বার করব। একটি বিলাশবহুল বাস দিল্লি থেকে নিয়ে এসেছে, গাধা কে দেখিয়ে ঘোড়া বলছে আর সেভেন স্টার বাস দেখিয়ে রথ বলছে। একটা বাস যার মধ্যে আছে খাবার জায়গা, ফূর্তি করার জায়গা। আমরা তো রথ মানে দেবদেবীর রথ শুনেছি, প্রভু জগন্নাথের রথ শুনেছি, বলরামের রথ শুনেছি, শুভদ্রার রথ শুনেছি, মদনমোহনের রথ শুনেছি, আমরা শুনেছি চৈতন্যদেবের রথ, আমরা শুনেছি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের রথ, আমরা শুনেছি শ্রী কৃষ্ণের রথ। কিন্তু এ কোন রথ? এখন নাম পাল্টে বলছে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা।
গণতন্ত্র যখন বাংলায় বিপন্ন ছিল, সিঙ্গুর হয়েছিল, নন্দীগ্রাম হয়েছিল, এই বাঁকুড়ায় যখন অমিয় পাত্ররা বন্দুকের নলে ভোট করাত, তখন আরএসএস, দিলীপ ঘোষ, অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীকে এই বাঁকুড়ার মানুষ খুঁজে পায়নি। তারাই নাকি গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা করবে। দেখতে যদি চাও বিজেপির গণতন্ত্র মানুষ মারার ষড়যন্ত্র, তাহলে উত্তরপ্রদেশ যাও। তারা গরুকে বাঁচাতে পুলিশকে খুন করছে।

আমি বিজেপিকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনারা যদি হিন্দু ধর্মের এত বড় ধারক ও বাহক হন, নোটবন্দীতে যে ১৫০ জন লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছে, তাদের প্রত্যেকে হিন্দু। জিএসটির জন্য যাদের ব্যাবসা লাটে উঠেছে তাদের অধিকাংশই হিন্দু। গোরক্ষপুরে যে ৮০টি শিশু অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারিয়েছে, তাদের সবাই হিন্দু। বুলন্দশহরে একটি গরুকে বাঁচাতে গিয়ে যে পুলিশকর্মীকে খুন করা হয়েছে, সেও হিন্দু। মধ্যপ্রদেশে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলতে যাওয়া যে সাত জন কৃষককে গুলি করে মারা হয়েছিল, তারাও হিন্দু।

বিজেপি শুধু মুখে জয় শ্রী রাম বলে মানুষের পাতের খাবার কেড়ে নিয়ে দিল্লীতে ১০০০ কোটি টাকা দিয়ে নিজেদের পার্টি অফিস তৈরী করেছে। এর জবাব আগামী দিনে বাংলার মানুষ দেবে।
আমরা সিপিএম আমলে শুনতাম ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আমরা খাবো তোমরা বাদ। এখন বিজেপির অসুররা বলছে, জয় শ্রী রাম মানুষের মাথার নেই কোনও দাম; জয় শ্রী রাম সিলিন্ডারের ১০০০ টাকা দাম, জয় শ্রী রাম পেট্রোল ডিজেলের ১০০ টাকা দাম; জয় শ্রী রাম দাঙ্গা করাই একমাত্র কাম, এই তাদের মূলমন্ত্র।

রামচন্দ্রের নামে যারা রাজনীতি করে, রামচন্দ্রের অভিশাপেই তাদের এই করুন পরিণতি হয়েছে।
ঈশ্বর সব সময় পূজনীয়, ঈশ্বর কখনও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাবহার্য নয়, এটা তাদের জেনে রাখা উচিত। আমরাও ধর্ম করি , আমরাও ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই, আর বিজেপির মতো ধর্ম বিক্রী করে আমাদের রাজনীতি করতে হয় না।

আমরা বিশ্বাস করি আমার ধর্ম আমার বাড়িতে করবো। কিন্তু আমার ধর্ম কোনও দিন বিভাজনের কথা শেখায়নি। আমি যখন মানুষের ভোটে নির্বাচিত তখন আমার একটাই ধর্ম – মানব ধর্ম, মানুষের জন্য কাজ করা। আমি ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য কাজ করে যাবো, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শকে সামনে রেখে।

ভারতবর্ষ দুবার লুঠ হয়েছে, এক হয়েছে ইংরেজদের আমলে, আর এক হচ্ছে এই নরেন্দ্র মোদীর সরকারের আমলে। ইংরেজদের কি করুণ পরিণতি হয়েছিল আমরা উপলব্ধি করেছি, এবং আগামীদিনে এদেরও উপযুক্ত জবাব কড়ায় গন্ডায় গণতান্ত্রিক ভাবে দিয়ে এদেরকে দেশছাড়া আমরা করবো। হাতে আপনার জোড়া ফুলের ঝান্ডাটা রাখুন। মনে রাখবেন হাতে জোড়াফুলের ঝান্ডা আর দিল্লীতে হবে নরেন্দ্র মোদি ঠান্ডা। আপনার চোখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ আর দিল্লীতে হবে বিজেপি নিঃস্ব। এই মূলমন্ত্রকে নিয়ে আমদের আগামীদিন লড়াই করতে হবে।

সিপিএম আবার কৃষকদরদী হতে চাইছে। যারা নেতাই করলো, যারা নন্দিগ্রাম করলো, যারা সিঙ্গুর করলো। কৃষক মেরে কৃষক প্রেম, তাদের পরিচয় হচ্ছে সেম সেম সিপিএম। তারা নাকি আবার কৃষকদের হয়ে কথা বলছে। যারা কৃষকদের নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে, যারা কৃষকদের জমি ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না। ত্রিপুরায় সিপিএম দলটা বিজেপিকে বিক্রী করে দিয়েছে। আর কংগ্রেস সম্পর্কে যত কম বলা যায় তত ভালো, গলা বিশ্রাম পাবে। কারণ এদের কোনও নীতি, আদর্শ, নৈতিকতা বলে কিছু নেই।

হাজার হাজার দল কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নিজেদের তৈরী করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু একমাত্র দল তৃণমূল যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরী করেছে যা আজকে সসম্মানে বাংলার উন্নয়নের ধারাকে পরিচালনা করছে। আমরা কোনও দিন পার্ট টাইম মুখ্যমন্ত্রীর কথা মুখে আনি না, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে প্রশাসনিক বৈঠকে এসডিও, বিডিও, ওসি, আইসি কে নিয়ে গ্রামেগঞ্জে ছুটে বেরিয়েছে , আমি মনে করি অভূতপূর্ব। কোনও মুখ্যমন্ত্রী এটা করতে পারেনি, এটা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়।

নরেন্দ্র মোদি চা বিক্রী করে। আমি চাওয়ালাদের সম্মান করি, নরেন্দ্র মোদি চাওয়ালাদের নামে প্রচার করে চাওয়ালাদের কলুষিত এবং কালিমালিপ্ত করেছে। চাওয়ালাও নিজে কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করে, ভারতবর্ষ রসাতলে পাঠায় না। আর নরেন্দ্র মোদি বলছে চা বিক্রী করে। আমরা কোনও দিন তাকে চা বিক্রী করতে দেখিনি। আর বাংলার সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজও টালির ঘরের ছাদে থেকে, ১০০ টাকার চপ্পল আর ৪০০ টাকার শাড়ি পরে ১০ কোটি মানুষের উন্নয়নের জয় যাত্রা তিনি আজও পর্যবেক্ষণ করছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের একটা পার্টি অফিস রয়েছে ৩৬ নম্বর তোপসিয়া রোডে। সেই পার্টি অফিসের যা পরিণতি ছিল ২০১০ এর আগে , আজও সেই পার্টি অফিসের অবস্থা। আর বিজেপি ২০০০ কোটি টাকা খরচা করে সেভেন স্টার পার্টি অফিস করেছে। এদের কাছে পাঁচ তারা হোটেল হার মানবে।

রামের নামে ব্যাবসা, বজরং বলির নামে ব্যাবসা। যা কিছু হচ্ছে বলছে জয় শ্রী রাম. আচ্ছা এত বড় যদি তোমরা হিন্দুধর্মের ধারক হও, সদ্য সমাপ্ত এতো বড়ো একটা দুর্গোৎসব গেল। রামচন্দ্রও তো দুর্গা মায়ের পুজো করতেন। অকাল বোধন রাম করেছিলেন বলেই আমরা জানি। সেই দুর্গোৎসবে ভারতীয় জনতা পার্টি একটাও শুভেচ্ছা বার্তা দেয়নি। উল্টে, ২৮ হাজার ক্লাবকে অনুদান দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। হিন্দু ধর্মের সব থেকে বড় উৎসব – দুর্গোৎসবের প্রসার ঘটানোর জন্য। তার বিরুদ্ধে গিয়ে আবার কোর্টে মামলা করেছে। ইমাম ভাতা, মোয়াজ্জেম ভাতা দিলে তোমরা মামলা করছ আর দুর্গোৎসবে ক্লাবগুলোকে টাকা দিয়ে প্রসার ঘটাতে চাইছি ,তখনও মামলা করছ। হিন্দুকে বলছে মুসলমান-বিরোধী আর মুসলমানকে বলছে হিন্দু-বিরোধী।

উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন নেই ওদের। খালি ভাগ আর বিভাজন। কেন? যত বিভাজন করবে বাংলায় তত আগুন জ্বালাতে পারবে আর তত তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় আসবে। ভারতবর্ষের ২৮টা রাজ্য টাকার বিনিময়ে গেরুয়া হবে ,বাংলা কোনোদিন অর্থের বিনিময়ে গেরুয়া হবে না। আমরা মনে করি আত্মসমর্পণ আর মৃত্যু এক। আমরা জীবন দিতে রাজি কিন্তু আত্মসমর্পণ কারও কাছে করবো না।

আপনারা ৩৪টা লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ২০১৪ সালে জিতিয়েছিলেন। তার ফলস্বরূপ কি হয়েছে জানেন? আজকে ভারতীয় জনতা পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও এফআরডিআই বিল সংসদে এখনও লাগু করতে পারেনি শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য।

এই পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বিরুদ্ধে সিপিএমকে কটা মিছিল করতে দেখেছেন? কংগ্রেসকে কটা মিছিল করতে দেখেছেন? অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কটা মিছিল করতে দেখেছেন?

অসমে বাঙালীদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হল গুলি করে; ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার দায় নেবে না? গুজরাতে গিয়ে বলছে বিহারি খেদাও ,বিহারে গিয়ে বলছে বাঙালি খেদাও। আর এখানে এসে বলছে এই খেদাও’ সেই খেদাও।

যে নেতা হয়, সবার নেতা হয়। যে জনপ্রতিনিধি হয়, সে সবার জনপ্রতিনিধি হয়। এটা বাংলা। এটাই আমাদের কৃষ্টি ,এটাই আমাদের সংস্কৃতি। আর তারা খালি বিভাজনের কথা বলে। একে ভাগ করো, তাকে ভাগ করো, এসসি ভালো নয়, এসটি ভালো নয়, দলিত ভালো নয়। আজ দলিতদের উপর, এসটি দের উপর কিভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে। মধ্যপ্রদেশ হোক, ছত্তিসগড় হোক, ঝাড়খন্ড হোক – যেখানে বিজেপি সরকার হয়েছে এসসি, এসটিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। সংখ্যালঘুদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে। হিন্দুদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেছে।

সব জায়গায় গিয়ে জয়শ্রীরামের নাম ধ্বনি দিয়ে বলছে এই করবো, তাই করব। কোন কাজটা মোদী এই পাঁচ বছরে হিন্দুদের জন্য করেছে ?একটা উদাহরণ কেউ দিতে পারবে? আমি তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০টা উদাহরণ দিলাম। একটা উদাহরণ যেটা নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের কেন্দ্রের সরকার তথাকথিত হিন্দুদের জন্য বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছে? একটা উদাহরণ কেউ দিতে পারবেনা। একটা কাজের নাম হচ্ছে নমামি গঙ্গে – গঙ্গা পরিষ্কার করার অভিযান। তার দুর্নীতির পরিমান কত? ৩ হাজার কোটি টাকা। গঙ্গা পরিষ্কার করার নাম করে ৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে এই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার।

এই দুদিন আগে সংসদে বিজেপির সাংসদ রাজ্যবর্ধন রাঠোর লিখিতভাবে উত্তর লোকসভাকে জানিয়েছেন যে কেন্দ্রের সরকার ৪ বছরে ৫২৭৮ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর প্রচারে খরচ করেছে। বেটি বাঁচাও প্রকল্পের বরাদ্দ কত? ১০০ কোটি। আর কন্যাশ্রী? ৬০০০ কোটি। একটা রাজ্যের জন্য বাজেট কত? ছয় হাজার কোটি। এই হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে পার্থক্য। তারা ২৮টি রাজ্য ১০০ কোটি টাকা দিয়েছে, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বাংলায় ৬ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। আমরা ছোট বেলায় একটা কথা শুনতাম “নিজে যারে বড় বলে বড় সে নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী নিয়ে যারা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছে, যারা প্রশ্ন তুলেছে আজকে নেদ্যারল্যান্ডের হেগ শহরে তিনিও গেছেন আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও গেছেন। ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রীকে বিশ্ব বন্দিত করে বিশ্বের দরবারে প্রথম পুরস্কার নিয়ে ফিরে এসেছেন। আর নরেন্দ্র মোদি কাঁচকলা; একটা সাইকেল নিয়ে ফিরে এসেছেন। এই হচ্ছে তার সরকার আর আমাদের সরকারের মধ্যে পার্থক্য।

‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ এ টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেয়। স্মার্ট সিটিতে টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই। মানুষ খাবে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই। গ্রাম সড়ক যোজনায় টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই। আবাস যোজনায় টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চার বছরে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন; দেশে কম থেকেছেন বিদেশে বেশি ঘুরেছেন। যাতায়াত খরচ চার বছরে দু’হাজার কোটি টাকা। আমি তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বলছি। পাঁচ হাজার, দু হাজার আর তিন হাজার – এই দশ হাজার কোটি টাকা তোমরা খরচ করছি মূর্তি বানাতে, বিদেশ ভ্রমণে আর নিজেদের প্রচারে। আর বাংলার মানুষের জন্য যখন তোমাদের কাজ করতে হয় তখন তোমাদের কোষাগারে টাকা নেই।

আজকে ৮০ শতাংশ মানুষ বিপিএল তালিকার নিচে রয়েছেন। তাদেরকে কোনওভাবে দু’মুঠো ভাত, পরনে জামা উপরে ছাদ কি করে করা যাবে সে নিয়ে তারা ব্যস্ত নয়। তারা ব্যস্ত মূর্তি করব, মন্দির করব – এসব নিয়ে। কিন্তু কিছুই করবে না। খালি ভাঁওতা, মিথ্যা কথা আর প্রতারণা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছেন।

এই বাঁকুড়া জেলা আগে কি পরিস্থিতি ছিল আজ থেকে আট-নয় বছর আগে? সকাল-দুপুর-বিকেল মানুষ বাইরে বেরোতে ভয় পেত। আজকে সেখান থেকে আমার মা বোনেরা যেভাবে স্বতস্ফূর্ত ভাবে আমাদের সভায় এসে পৌঁছেছেন এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা আগে কিছুই ছিল না। প্রশাসন থেকেও ছিল না, এমপি থেকেও ছিল না, এমএলএ থেকেও ছিল না। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমতি, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও ছিলনা। আজকে সেখান থেকে শুরু করে জঙ্গলমহল উৎসব, নিজ গৃহ নিজ ভূমি, গীতাঞ্জলি, একের পর এক ৪টে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরী করেছে যা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ভোটের জন্য রাজনীতি করত তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী দিতেন না। সবুজসাথীর সাইকেল দিতেন না। কেন জানেন? যাদের সাইকেল দিচ্ছেন কেউ একাদশ শ্রেনীতে পড়ছে, কেউ দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছে, কেউ নবম শ্রেণীতে পড়ছে, কেউ দশম শ্রেণীতে পড়ছে। অর্থাৎ ভোটাধিকার প্রয়াগ করার পর্যাপ্ত বয়সে পৌঁছায়নি। কিন্তু তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার হাতে উন্নয়নের দাবি তুলে দিয়েছেন। তাকেও উন্নয়নের ঋণে আবদ্ধ করেছেন। তাকেও উন্নয়নের আলোয় আলোকিত করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “তোমাকে ভোট দিতে হবে না, সমাজ গড়, আগামীদিনে বাংলা গড়, নিজেদের বাবা মা গুরুজনেদের গৌরাবন্বিত করো এবং আমাদের সমাজকে শক্তিশালী কর”। এই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই লক্ষ লোকপ্রসার শিল্পীকে আলাদা করে ভাতা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে বাঁকুড়া জেলায় সংখ্যাটা হচ্ছে ৩৫ হাজার।

বিজেপি একটা মূর্তি তৈরী করেছে; তার দাম ৩ হাজার কোটি টাকা। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি তৈরী করেছে। তিনি আমাদের কাছে দার্শনিক, তিনি আমাদের কাছে আবেগ, তিনি আমাদের কাছে পূজনীয়। কিন্তু সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল যদি জীবিত থাকতেন তাহলে লজ্জিত হতেন বিজেপির এই কার্যকলাপ ও কর্মকান্ড দেখে। একটা মূর্তি করছে টাকা আর ভারতবর্ষের বাংলার মানুষকে টাকা দেওয়ার সময় টাকা নেই।

আজ ১৯ তারিখ; আগামী ১৯ তারিখ ব্রিগেড। আমাদের আরো জোরদার প্রচার করতে হবে, জনসংযোগ বাড়াতে হবে, কর্মসূচি বাড়াতে হবে। আবেগ সঞ্চারিত করুন। আগামীদিন জোরদার লড়াই হবে। আমরা মানুষকে অর্থ নয়, ভালোবাসা, উন্নয়ন দিয়ে কলকাতায় নিয়ে যাই। আমরা মানুকে অনুরোধ করি তারা যেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকেন। আমাদের সামর্থ অনুযায়ী আমরা মানুষকে কলকাতা আসতে সাহায্য করব। আমাদের নেত্রী বলেন যে এই আন্দোলন সাধনার থেকে কিছু কম না। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা ,সন্মানরক্ষার আন্দোলন।

বিজেপি যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীতা করবে তত মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাঁকুড়ায় দুটি আসন আছে – বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া। দুটো আসনেই আমরা জয়ী হব। আপনারা আরও কুৎসা করুন, আমাদের কর্মীদের রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের মানসিকতাটা আরও তীব্র হবে। তৃণমূল কংগ্রেস ৪২-এ ৪২ – আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হলাম । বাংলাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। আরএসএস হঠাও, দেশ বাঁচাও। সাম্প্রদায়িকতা হঠাও, দেশ বাঁচাও। জাতির বিভাজন হঠাও, দেশ বাঁচাও। দড়ি ধরে মারো টান, ভারতীয় জনতা পার্টি হবে খান খান।